মুক্তাগাছা প্রতিনিধি: স্কুলে ঢোকার কোনো পথ নেই। কোথায় স্কুলটি স্থাপিত এমন কোনো সাইনবোর্ডও নেই। পাকা সড়কে একটি সাইনবোর্ড, স্কুলের দিকে তীরচিহ্ন দেওয়া। এ সাইনবোর্ড ওই স্কুলের নয়, লেখা আছে ব্যতিক্রম শিক্ষাক্রম নামে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের। স্কুলের সাইনবোর্ডের তীরচিহ্ন দেওয়া ওই সরু পথে ঢুকলেই দেখা যাবে, চার কক্ষের একটি পুরনো পাকা বিল্ডিং।
বিল্ডিং ছুঁয়ে আছে থৈ থৈ পানি। পুকুরের পানির ওপরে ভেসে আছে ওই পাকা ভবনটি। পানির স্রোতে ভবনের ইট খসে খসে পড়ছে। ভবনটি দেখেও বোঝার উপায় নেই এ ভবনটি কিসের। কারণ ভবনের সামনে কোথাও কিছু লেখা নেই। ভেতরে ঢুকলে শোনা যাবে শিক্ষার্থীর পড়ালেখার আওয়াজ। এ রমকই চিত্র মুক্তাগাছা শহরের নন্দিবাড়ির আহসানউল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এভাবেই চলছে এ স্কুলটি। স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা অফিসের কোনো নজর নেই এ স্কুলটির দিকে। অথচ এটি একটি ভোটকেন্দ্রও।
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা শহরের নন্দিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা বিশিষ্ট সমাজসেবক মরহুম আহসানউল্লাহ তার নিজ নামে ১৯৮১ সালে ১৫ শতাংশ জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে এর কার্যক্রম শুরু হয়। পরে বর্তমান সরকারের আমলে সব রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে এ স্কুলটিও সরকারি হয়।
প্রতিষ্ঠাতা আহসানউল্লাহর পুকুর রয়েছে স্কুলের মাঠ ঘেঁষে। পুকুরের পাড় না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পুকুরের পানি উপচে আসে স্কুলের মাঠে। এভাবে জলাবদ্ধতা হতে হতে স্কুলের মাঠও এখন পুকুরে পরিণত হয়েছে। সারা বছরই স্কুলের মাঠে এখন পুকুরের পানি জমে থাকে। স্কুলের বারান্দা পর্যন্ত পানি জমে থাকে। বৃষ্টি হলে বারান্দায় ওঠে পানি। জলবদ্ধতায় এখন স্কুল ভবনের ইট খসে উঠতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় হুমকির মধ্যে পড়েছে পুরো স্কুলটি। শিশু শিক্ষার্থীরা অনেকটা ঝুঁকির মধ্যেই স্কুলে আসা-যাওয়া করছে।
স্কুল এলাকার বাসিন্দা আক্কাছ আলী বলেন, এভাবে কোনো স্কুল চলতে পারে না। বছরের পর বছর ধরে স্কুলমাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই আজকে স্কুলের এ দশা।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্কুলটি বাঁচাতে তিনি নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার জানিয়েছেন। পৌরসভা কর্তৃপক্ষকেও তিনি জলবদ্ধতার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মাঠে পানি জমে থাকায় এলাকাবাসী তাদের সন্তানদের স্কুলে দিতে চান না। এ ছাড়া পায়খানা ও টিউবওয়েল না থাকায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নিলুফা হাকিম বলেন, স্টু্কল মাঠে জলাবদ্ধতার বিষয়টি বিভিন্ন সময় উপজেলা সমন্বয় সভায় তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া মা সমাবেশ ডেকেও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নিলে আমাদের পক্ষে কিছুই করার নেই।
মুক্তাগাছার ইউএনও সুবর্ণা সরকার বলেন, স্কুলটি তিনি পরিদর্শন করেছেন। চিত্রটি দেখে তার খুব খারাপ লেগেছে। দ্রুত স্কুলমাঠ থেকে জলাবদ্ধতা দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া স্কুলটি বাঁচাতে সব ধরনের চেষ্টা করা হবে।